ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে সফলতম ও জনপ্রিয় ক্রিকেট দল হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া এমন একটি ক্রিকেট টিম যারা মোট ৫ বার বিশ্বকাপ জিতেছে এবং সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছে। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাফল্য তাদেরকে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এতটা জনপ্রিয় করেছে। সম্প্রীতি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের টি-টোয়েন্টি এবং ওডিআই ম্যাচের অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের অবসরের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ক্রিকেট খেলার দুনিয়ায় অস্ট্রেলিয়া প্রাচীনকাল থেকেই অনেক এগিয়ে আছে। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে প্রতিনিয়ত যেন কিছু কিংবদন্তি ক্রিকেটার এর জন্ম হয়। তারা তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাফল্যের কারণে ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম স্মরণীয় করে রাখলেন। আমরা এমন একজন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি খেলোয়াড় অ্যারন ফিঞ্চ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
চলুন তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক, অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ওডিআই অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ হঠাৎ কেন অবসরের ঘোষণা দিলেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
অস্ট্রেলিয়ান সুপারস্টার ও অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ওডিআই ম্যাচ থেকে অবসর
প্রত্যেকটা মানুষের সাফল্য তাকে যেমন অনেক এগিয়ে নিয়ে যায়,তেমনি তার ব্যর্থতাই আবার তাকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দেয়। কয়েক বছর আগেই সাফল্যের তুঙ্গে থাকা অ্যারন ফিঞ্চ ওডিআই ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সাফল্য তাকে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের দায়িত্ব দিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি তার ব্যর্থতায় অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড ও তার ক্রিকেট ভক্তরা তার প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
ক্রিকেট দুনিয়ায় যা সচরাচর হয়ে থাকে আমরা সবসময় দেখে থাকি সাফল্যের তুঙ্গে থাকা ক্রিকেটার সবার কাছেই প্রিয়,কিন্তু তার ব্যর্থতার সময় তার কাছে কেউ থাকেনা। আর তাই ক্রিকেটাররা অনেক সময় নিজের ইচ্ছা বা বাধ্য হয়ে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা করে থাকেন।
সম্প্রীতি ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে সফলতম দল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও ক্রিকেটের আরেক পরাশক্তি নিউজিল্যান্ডের সাথে একটি ওডিআই সিরিজের আয়োজন করা হয়েছে। অ্যারন ফিঞ্চের নেতৃত্বে টিম অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলছে।
আসন্ন সিরিজের শেষ ম্যাচে রাগেই অ্যারন ফিঞ্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন, তিনি ওয়ানডে অধিনায়ক থেকে সরে দাঁড়াবে এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিয়মিত খেলবেন। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তাই তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফোকাস করার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
গত রবিবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ফরম্যাটে শেষ ম্যাচ খেলবেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। কেয়ার্নসে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে চলমান ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচের পর ওডিআই অধিনায়কত্ব ও ওয়ানডে খেলা থেকে বিদায় ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে অ্যারন ফিঞ্চের নেতৃত্বে টিম অস্ট্রেলিয়া ঘরের মাটিতে আগামী মাসে বিশ্বকাপে টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব অব্যাহত রাখবেন।
সম্প্রীতি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড অ্যারন ফিঞ্চকে অধিনায়কত্ব করে অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড ঘোষণা করেছেন। অ্যারন ফিঞ্চের ওডিআই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ায় অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড ও তার ফ্যানরা অনেকটা দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ওডিআই অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ অবসরের ঘোষণা
অস্ট্রেলিয়ার সফলতম অধিনায়ক ফ্যানদের উদ্দেশ্যে বলেন,কিছু অবিশ্বাস্য স্মৃতির সাথে এটি একটি দুর্দান্ত রাইড ছিল। আমি নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মনে করি, কিছু উজ্জ্বল ওয়ানডে দলের অংশ হতে পেরে ও আমার টিমের জন্য কিছু করতে পেরে।। আমি যখন আমার টিমে যাদের সাথে খেলেছি এবং পর্দার আড়ালে থাকা অনেক লোকের দ্বারা অনেক সমর্থন ও দোয়া পেয়েছি।
আমার মনে হয় এখন সময় এসেছে একজন নতুন নেতাকে পরবর্তী বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার এবং বিশ্বকাপ জেতার জন্য সম্ভাব্য সর্বোত্তম সুযোগ দেওয়া উচিৎ। আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই যারা আমার এই যাত্রায় পাশে থেকে সমর্থন করেছেন।
আরো জানতে দেখুন …
- টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের স্কোয়াড
- আই সি সি – আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল
- ক্রিকেট খেলা কে এবং কখন আবিষ্কার করেন?
অস্ট্রেলিয়ার সফলতম অধিনায়ক
চলতি বছর অ্যারন ফিঞ্চ ওয়ানডে ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফর্ম করতে পারেনি। তিনি ১৩ ম্যাচে রান করেছে মাত্র ৬৯। অ্যারন ফিঞ্চ ওয়ানডে সিরিজে ফ্রম এতই খারাপ ছিল যে তিনি শেষ ১২ ইনিংসে মধ্যে ০৫টিতে ০ রানে ঘরে ফিরেছেন।তিনি তার শেষ ১২ ইনিংসে মোট রান ছিল ২৬।
আগামী ওডিআই বিশ্বকাপ ২০২৩ ভারতে অনুষ্ঠিত হবে কিন্তু তার শারীরিক ও মানসিক অসুবিধার জন্য এবং নতুন কাউকে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য এমন সিদ্ধান্ত ও দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করেছিলেন। তবে টাউনসভিলে জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন যে পরের বছরের টুর্নামেন্টটি নাগালের বাইরে ছিল। যদিও শারীরিক দিক থেকে তার সাম্প্রতিক হাঁটুর সমস্যা বড় সমস্যা সৃষ্টি করছে না, তবে তার কাঁধে সমস্যা রয়েছে।
অ্যারন ফিঞ্চ বলেন, আমি চাইলেই আগামী ইংল্যান্ড সফরে ওডিআই সিরিজের ফর্মে ফিরে এসে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে পারতাম। তবে এটা আমার স্টাইল নয়, আমি ফর্মে না থেকেও আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায় নি এবং নতুন কাউকে নেতৃত্ব দিতে আমার কোন বিরোধিতা নেই। দলের নেতৃত্ব নতুন কেউ পেলে অবশ্যই আপ্রাণ চেষ্টা করবে দলকে ভালো পজিশনে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি এমনটাই আশা করছি।
আমার প্রিয় টি আমার নিজের দেশ আগামী বিশ্বকাপে ট্রফি নিজেদের ঘরে ফিরিয়ে আনবে আমি সব সময় সবার জন্য দোয়া ও সমর্থন করবো। আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্য এবং আত্মবিশ্বাসী যে আমি কখনই এটি এতদূর পেতাম না। শুধু আমার শরীরের সাথে সাথে কিছুটা রূপ নিয়ে।
ফিঞ্চ নিশ্চিত করেছেন ঘরের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরে মেলবোর্ন রেনেগেডসের সাথে বিগ ব্যাশ আসরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। বিগ ব্যাশ আসরে তার ক্যারিয়ারের মূল্যায়ন করবেন। ক্রমবর্ধমান টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি বিশ্ব ফিঞ্চকে ঘরোয়া দৃশ্যে প্রচুর সম্ভাব্য বিকল্প সরবরাহ করে। বিশ্বকাপের পর আগামী আগস্ট পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার আর কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নেই।
অধিনায়ক হিসাবে অ্যারন ফিঞ্চের সফলতা
অধিনায়ক হিসাবে অ্যারন ফিঞ্চের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ক্ষীণ সমাপ্তি সত্ত্বেও তিনি অসামান্য সফলতা ও সম্মানের সাথে বিদায় জানিয়েছেন। অধিনায়ক হিসাবে অ্যারন ফিঞ্চের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৭টি সেঞ্চুরি সহ ৫৪০০ রানেরও বেশি করেছেন। যেখানে অধিনায়ক হিসাবে রিকি পন্টিং ২৯টি সেঞ্চুরি,ডেভিড ওয়ার্নার ১৮টি সেঞ্চুরি,মার্ক ওয়াহ ১৮টি সেঞ্চুরি অস্ট্রেলিয়া অধীনে ক্যাপ্টেন্সির মধ্যে সর্বোচ্চ।
অ্যারন ফিঞ্চের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫৪টি ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে মোট ৩০টি ম্যাচে জয়লাভ করেছে। যা অ্যারন ফিঞ্চের অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারে একটি অসামান্য সাফল্য বলা যায়। নিচে অ্যারন ফিঞ্চের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে ক্রিকেটের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো।
ফরম্যাট | ম্যাচ | ইনিংস | রান | সর্বোচ্চ রান | গড় | সেঞ্চুরি | ফিফটি |
ওডিআই | ১৪৬ | ১৪২ | ৫৪০৬ | ১৫৩ | ৩৮.৮৯ | ১৭ | ৩০ |
টি-টোয়েন্টি | ৯২ | ৯২ | ২৮৫৫ | ১৭২ | ৩৫.২৫ | ০২ | ১৭ |
টেস্ট | ০৫ | ১০ | ২৭৮ | ৬২ | ২৭.৮ | ০০ | ০২ |
প্রাথমিকভাবে ২০১৪ সালে অ্যারন ফিঞ্চ কে টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে তখনকার ওডিআই ক্যাপ্টেন স্টিভেন স্মিথ ও সহকারি অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির হওয়ার কারণে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার এক বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। যার কারণে পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ অ্যারন ফিঞ্চ ওডিআই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ক্যাপ্টেন হিসেবে ভূষিত করে।
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী বলেছেন, আমাদের ক্রিকেটের পক্ষ থেকে, আমি ওডিআই দলের অধিনায়ক এবং ওডিআই ফরম্যাটের একটি বিস্ময়কর ব্যাখ্যাকারী হিসাবে অ্যারন ফিঞ্চকে তার অসামান্য সফলতা ও অর্জনকে অবদানের জন্য অভিনন্দন জানাতে চাই। তিনি আরো বলেন, অ্যারন ফিঞ্চ একজন অসাধারণ প্রতিভাধর, অক্লান্ত পরিশ্রমী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ খেলোয়াড় যার ব্যাট হাতে অসামান্য কাজগুলি তার শক্তিশালী এবং অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্বের সাথে মিলে গেছে। ওডিআই অধিনায়কত্ব থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তটি এখন খেলার প্রতি তার নিঃস্বার্থ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য ও যোগ্য লোকদের সুযোগ দেওয়ার একটি উপায় মাত্র মাত্র।
অ্যারন ফিঞ্চের এমন সিদ্ধান্তের কারণে ক্রিকেট দুনিয়া অনেকটা হতভম্ব। অ্যারন ফিঞ্চ সম্পর্কে আপনার মতামত বা পরামর্শ আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আমাদের এই পোষ্টটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে, অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টে জানাবেন, ধন্যবাদ।